অতি প্রাচীন কাল থেকেই খেজুর একটি জনপ্রিয় ফল। খেজুরের উপকারিতা এতো বেশি যে গুণে সহজে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে মুসলমানদের নিকট এই ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এটি নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর। তবে খেজুরের মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে।স্বাদের দিক থেকে আমরা বিভিন্ন ধরণের খেজুর দেখতে পাই। যেমন- আজওয়া, মরিয়ম, আনবারা, সাফাওয়ি, মুসকানি, খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদর প্রভৃতি খেজুর। এদের মধ্যে তিউনেসিয়ান খেজুর অন্যতম। এটি খুবই সুস্বাদু এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খেজুর।
মরিয়ম খেজুরের নাম শোনেনি এ রকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। এ খেজুরের বিভিন্ন উপকারিতার কারনে সকল খেজুরের মধ্যে এ খেজুরটি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর মরিয়ম খেজুরের পুষ্টিগুণ শরীরের ব্যাপক উপকারে আসে। তবে ইসলাম ধর্মে রমজান মাস ছাড়াও নিয়মিত খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমাদের মহানবী (সাঃ) নিজে প্রতিদিন সাতটি খেজুর খাওয়ার কথা বলেছেন। এতে নানা রোগ-বালাই, বিষাক্ত জিনিস, জাদু-টোনা থেকে মুক্তি মিলবে জানিয়েছেন। এতে বুঝা যায়, শারীরিক সুস্বাস্থ্য অর্জনে মরিয়ম খেজুরের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
খেজুরের পুষ্টিগুণাগুণ
খেজুর হল পুষ্টির প্রাকৃতিক উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে সহ প্রচুর খাদ্য গুণ রয়েছে যা আপনাকে প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা পূরন করতে সাহায্য করে। আসুন এর পুষ্টিগুণ গুলো জেনে নেই।
প্রোটিনঃ খেজুরে থাকা প্রোটিন আপনার পেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিটামিনঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫ এবং বি৬। এছাড়াও ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণের সহজ একটি মাধ্যম হচ্ছে মরিয়ম খেজুর। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি যেমন ভালো থাকে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আয়রনঃ আয়রন মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বিশেষ করে নারীদের দেহে আয়রনের চাহিদা পুরুষদের তুলনায় বেশি। আয়রনের অভাবে রক্তশুন্যতা দেখা দেয়। তাই আয়রনের অভাব পূরণ করতে মরিয়ম খেজুরের তুলনা নেই। এটি হৃদপিন্ডের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। যাদের হৃদপিণ্ড দুর্বল তাদের জন্য মরিয়ম খেজুর একটি আদর্শ খাদ্য হতে পারে। যা তার রোগ প্রতিরোধে প্রতিশেধক হিসেবে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই কাজ করবে।
কোলেস্টরেল এবং ফ্যাটঃ খেজুরে কোন বাড়তি চর্বি এবং কোলেষ্টরেল থাকে না বলে এটি খেল ওজন বেড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
ক্যালসিয়ামঃ খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা মানুষের হাড় গঠনে সহায়তা করে থাকে। এই ক্যালসিয়াম শিশুদের জন্য খুবই উপকারী এবং তাদের মাড়ি গঠনে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার শিশু ও পরিবারকে খেজুর খেতে উদ্বুদ্ধ করুন।
ফাইবারঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।
১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যে নিম্নোক্ত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় –
- ক্যালোরি ২৮২ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট ০.৪ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম ৬৫৬ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেটেড ৭৫ মিলিগ্রাম
- ফাইবার ৭ গ্রাম
- সুগার ৬৩ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৩%
- আয়রন ৫%
- ভিটামিন ১০%
- ম্যাগনেসিয়াম ১৪%
- কপার ১৮%
খেজুরের উপকারিতা
বছরে যতগুলো দিন, তার চেয়ে বেশি গুণ আছে খেজুরে। প্রাকৃতিক আঁশের আধিক্য থাকায় এর উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। গবেষকদের মতে শুকনা খাবারের মধ্যে খেজুরেই সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। যা বিপজ্জনক অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। নিচে খেজুরের কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হল-
১। খেজুর স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে সহায়তা করে। যা মানুষকে মানসিক প্রফুলতা দেয় এবং মন ভাল রাখতে সহায়তা করে।
২। সারাদিন রোজা রাখার পর পেট খালি থাকে বলে শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন খেজুর শরীরের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরে গ্লূকোজ এর ঘাটতি পূরণ করে শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩। শরীরে রক্ত শূণ্যতা পূরণে মরিয়ম খেজুরে থাকা আয়রন ভাল উপকারে আসে।
৪। ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করতে মরিয়ম খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
৫। খেজুরে আছে ডায়েটরি ফাইবার যা কলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৬। পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ, শুষ্ক কাশি এবং এজমা রোধে মরিয়ম খেজুর অনেক উপকারী।
৭। খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে।
৮। খেজুর এ প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে বিধায় যারা একটু দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমে হয়রান হয়ে যায় তাদের জন্য মরিয়ম খেজুর একটি উৎকৃষ্ট পথ্য।
৯। খেজুর পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে ।
১০। খেজুরের ক্যালসিয়াম দেহের হাড় ও দাঁতের মাড়ি মজবুত করে।
১১। খেজুরে থাকা ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
১২। খাদ্যে অরুচি দূর করতে খেজুর ব্যাপক সহায়তা করে।
১৩। খেজুরে আছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার এবং বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড যা খাবার হজমে সাহায্য করে থাকে। তাই বদ হজম থেকে বাঁচতে মরিয়ম খেজুর খুবই উপকারী।
১৪। খেজুরে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তবে শর্ত হচ্ছে খেজুর খাওয়ার সাথে প্রচুর পানিও পান করতে হবে। তাহলেই উপযুক্ত ফল পাওয়া যাবে।
১৫। খেজুরে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।
সতর্কতা
সকল খেজুরেরই বেশির ভাগ অংশে চিনি থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেজুর খাওয়া উচিত।
Reviews
There are no reviews yet.